সুলতান মাহমুদের উত্তরসূরী গজনভি শাসকগন ও গজনি রাজবংশের পতন

সুলতান মাহমুদের উত্তরসূরী গজনভি শাসকগন ও গজনি রাজবংশের পতন - (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্র) সুলতান মাহমুদের উত্তরসূরি গজনভি শাসকগণ (The Successors of the Sultan Mahmud Ghaznavi) - গজনি রাজবংশের পতন (The Fall of the Dynesty)


ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্র
সুলতান মাহমুদের উত্তরসূরি গজনভি শাসকগণ (The Successors of the Sultan
Mahmud Ghaznavi)

১০৩০ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান মাহমুদের মৃত্যুর পর গজনির সিংহাসনকে কেন্দ্র করে তার পুত্র মুহাম্মদ ও মাসুদের মধ্যে উত্তরাধিকার সংগ্রাম শুরু হয়। যুদ্ধে মুহাম্মদ পরাজিত হন। মাসুদ বড় ভাই মুহাম্মদকে অর্ধ ও কারারুদ্ধ করে পিতৃ সিংহাসনে আরােহণ এবং ১০৪০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। 

ঈশ্বরী প্রসাদের মতে, “মাসুদ ছিলেন পিতার মতােই উচ্চাভিলাষী, সাহসী এবং যুদ্ধোন্মাদ, অকুতােভয় এবং স্পষ্টভাষী।” ১০৩৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজধানীতে তার অনুপস্থিতির সুযােগে সেলজুক তুর্কিরা গজনির বিভিন্ন প্রদেশ আক্রমণ ও লুটতরাজ করতে থাকে। 

Read More:- 

সুলতান মাহমুদের ১৭ বার ভারত অভিযানসমূহ


১০৪০ খ্রিষ্টাব্দে মার্ভের নিকট এক যুদ্ধে মাসুদ তুর্কিদের হাতে পরাজিত হয়ে ভারতবর্ষে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু পথিমধ্যে হিন্দু ও তুর্কি ক্রীতদাসদের বিদ্রোহে তিনি বন্দি ও পরে তাকে হত্যা করা হয়। মাসুদের মৃত্যুর পর তার পুত্র মাওদুদ পিতৃহন্তাকারী চাচা মুহাম্মদকে পরাজিত করে গজনির সিংহাসনে আরােহণ করেন। 

তারপর আরও কয়েকজন দুর্বল শাসক গজনির সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। তবে ১০৫৯ খ্রিস্টাব্দে বাহরামের সিংহাসনে আরােহণের মধ্য দিয়ে গজনি সাম্রাজ্য তার লুপ্ত গৌরব কিছুটা ফিরে পায়। ৪০ বছর রাজত্ব করার পর ১০৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ইব্রাহিমের মৃত্যুর পর আলাউদ্দিন সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। 

Read more:- 

গজনির সুলতান মাহমুদ: সামরিক অভিযান, চরিত্র ও কৃতিত্ব (ইসলামের ইতিহাস) ২য় পত্র


এ সময় ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে গজনি সাম্রাজ্য আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। ১১১৭ খ্রিষ্টাব্দে সেলজুকদের সহায়তায় বাহরাম সিংহাসন অধিকার করেন। বাহরামের নির্দেশে ঘুরী অধিপতি কুতুবউদ্দিন নিহত হলে তার ভাই সাইফুদ্দিন ১১৪৮ খ্রিস্টাব্দে গজনি আক্রমণ ও বাহরামকে পরাজিত করেন। অবশ্য পরে তিনি গজনির পুনরুদ্ধার করেন ।

সাইফুদ্দিনকে হত্যা করা হয়। বাহরামের পর খসরু মালিক গজনির সুলতান পদে অভিষিক্ত হন। তিনি ছিলেন ইন্দ্রীয়পরায়ণ ও অযােগ্য শাসক। ঘুরীদের হাতে গজনির পতন ঘটলে তিনি লাহােরে আশ্রয় নেন। ১১৮৬ খ্রিষ্টাব্দে গজনির মুইজ উদ্দিন মুহাম্মদ বিন সাম (মুহাম্মদ ঘুরী নামে সমধিক পরিচিত) খসরু মালিককে পরাজিত করে লাহাের অধিকার করেন। আর এর মধ্য দিয়ে সবুক্তগীন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত গজনি সালতানাতের পরিসমাপ্তি ঘটে।

গজনি রাজবংশের পতন (The Fall of the Ghaznavi Dynesty)


প্রথমত, ঈশ্বরী প্রসাদ এবং লেনপুল গজনি সাম্রাজ্যের পতনের জন্য সুলতান মাহমুদকে দায়ী করেছেন। তাদের মতে, সুলতান মাহমুদের রাজ্যজয়ের সাথে উপযুক্ত সংহতি সমান তালে চলেনি । শাসন বা সরকার পরিচালনায়ও তিনি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। ফলে সাম্রাজ্যের অবক্ষয়ের উপাদানসমূহ নিঃশব্দে শক্তি সঞ্চয় করে এবং সুলতান
মাহমুদের মৃত্যুর পর সাম্রাজ্যে বিরুদ্ধবাদী শক্তি সচল হয় ।

দ্বিতীয়ত, সুলতান মাহমুদের শক্তিধর সাম্রাজ্য তার দুর্বল উত্তরাধিকারীদের হাতে পড়ে টুকরাে টুকরাে হয়ে যায় এবং দ্রুত পতনের দিকে ধাবিত হতে থাকে। ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন, “গজনি সাম্রাজ্য ছিল নানা জাতির সমষ্টি, এদের নিয়ন্ত্রণে রাখা কেবল শতনেত্র সুলতানের পক্ষে সম্ভব ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সুলতান মাহমুদের পর এরূপ শতনেত্রবিশিষ্ট যােগ্য সুলতান না থাকায় গজনি সাম্রাজ্যকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

Read More:- 

আরবদের সিন্ধু এবং মুলতান বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম অঞলের অবস্থা।


তৃতীয়ত, সুলতান মাহমুদ ভারত থেকে এনে গজনিতে যে বিপুল বিত্তের পাহাড় গড়েন তার উত্তরাধিকারী অযােগ্য শাসকেরা তা ভােগ-বিলাসে ব্যয় করে। বিলাসিতায় গা-ভাসিয়ে দিয়ে তারা বখে যায় এবং সাম্রাজ্য রক্ষা ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

চতুর্থত, বিভিন্ন দল ও গােষ্ঠীর মধ্যে স্বার্থ-সংঘাত, বিদ্রোহ, হত্যা ও ষড়যন্ত্রের ফলে গজনি সাম্রাজ্যের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। তদুপরি সেলজুকদের সাথে তাদের দীর্ঘ সংগ্রামের সুযােগে ঘুরীরা শক্তি সঞ্চয় করে মাথা তুলে দাঁড়ায়। 

সবলের নিকট দুর্বলের পরাজয় ইতিহাসের রায় । গজনি সাম্রাজ্যের ক্ষেত্রেও তাই ঘটে।
একক কাজ; গজনি রাজবংশের পতনের কারণগুলাে চিহ্নিত কর।