ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা
পাঠ-১৮-২৫
মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরী: উত্তর ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা; চরিত্র ও কৃতিত্ব (Muizuddin Muhammad Ghuri: Foundation of the Muslim Rule in North India; Character and Achievements)
ঘুরীদের পরিচয়: আফগানিস্তানের হিরাত ও গজনির মধ্যবর্তী পর্বতসংকুল স্থানে ঘাের রাজ্যটি অবস্থিত ছিল। এ রাজ্যের অধিপতিগণ ঘুরী' নামে খ্যাত। ঘুরীদের পরিচয় সম্পর্কে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
স্টেনলি লেনপুলসহ কোনাে কোনাে ঐতিহাসিক ঘুরীদের ‘আফগান জাতি সদ্ভূত’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে অধিকাংশ পণ্ডিতের মতে, ঘুরীরা ছিল পূর্বাঞ্চলীয় পারসিক জাতি হতে উদ্ভূত।
ঐতিহাসিক মিনহাজ-ই সিরাজ ঘুরী বংশকে তাদের পূর্ব পুরুষ শাসনাব-এর নামানুসারে ‘শাসনাৰী' বংশ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ঐতিহাসিক তথ্য মতে খ্রিষ্টীয় দশম শতাব্দীতে শাসনাবীয়রা পারস্য থেকে মধ্য এশিয়া হয়ে ঘুরী রাজ্যে বসতি এবং ক্রমান্বয়ে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।
একাদশ শতাব্দীর শুরুতে ১০০৯ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান মাহমুদ ঘুরী রাজ্য আক্রমণ করে একে গজনির সামন্তরাজ্যে পরিণত করেন। নিয়মিত কর প্রদান ও আনুগত্য প্রদর্শন ছাড়াও সুলতান মাহমুদের রাজত্বকালে ঘুরীরা বিশ্বস্ততার সাথে তার পক্ষে যুদ্ধ করে।
সুলতান মাহমুদের উত্তরাধিকারী গজনি সুলতানদের মধ্যে গৃহবিবাদ, অন্তঃকলহ ও সেলজুক তুর্কিদের সাথে
যুদ্ধের ফলে গজনি সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সুযােগে ঘুরীরা পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে এবং তারা গজনির সুলতানদের আনুগত্য অস্বীকার করে তাদের সাথে ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়।
যুদ্ধের ফলে গজনি সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সুযােগে ঘুরীরা পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে এবং তারা গজনির সুলতানদের আনুগত্য অস্বীকার করে তাদের সাথে ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়।
আরু দেখুনঃ-
সুলতান মাহমুদের উত্তরসূরী গজনভি শাসকগন ও গজনি রাজবংশের পতন
ক্ষমতার লড়াইয়ে ঘুরী সর্দার মালিক কুতুবউদ্দিন হাসান ও সাইফউদ্দিন ঘুরী গজনির সুলতান বাহরাম শাহের (১১১৭-৫২ খ্রি.) নিকট পরাজিত ও নির্মমভাবে নিহত হন। এ ঘটনা ঘুরীদের মধ্যে প্রতিশােধ স্পৃহা প্রজ্বলিত করে। নিহত ঘুরী ভ্রাতৃদ্বয়ের অনুজ আলাউদ্দিন হুসাইন ভ্রাতৃহত্যার প্রতিশােধ গ্রহণ করার জন্য গজনি আক্রমণ করে সুলতান বাহারাম শাহকে বিতাড়িত করেন।
আলাউদ্দিন এক সপ্তাহ ধরে গজনি লুণ্ঠন, অগ্নিসংযােগ করে এর ইমরাতসমূহ ধ্বংস এবং অধিকাংশ অধিবাসীদের হত্যা করে ইতিহাসে ‘জাহানসুজ' বা 'পৃথিবীদাহক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। আলাউদ্দিন বলখ, তুখারিস্তান, জারুম, বুস্ত, ঘাজিস্তান প্রভৃতি অঞ্চল অধিকার করে ঘুরীদের কর্তৃত্ব সম্প্রসারণ করেন।
তবে ঘুজ তুর্কিরা তাঁর নিকট থেকে বলখ, তুখারিস্তান এবং হিরাত ছিনিয়ে নেয়। ১১৬১ খ্রিষ্টাব্দে আলাউদ্দিনের মৃত্যুর পর তার পুত্র সাইফউদ্দিন ঘাের রাজ্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ঘুজ তুর্কিদের নিকট থেকে হিরাতের অংশবিশেষ দখল করেন বটে, তবে এসময় ঘুজরা সুলতান খসরু শাহকে পরাজিত করে গজনি দখল করে নেয়। সাইফুদ্দিনের পর তার চাচাতাে ভাই গিয়াস উদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরী উত্তরাধিকারী হন।
ঘুজদের পরাজিত করে তিনি গজনি অধিকার করেন ।
হিরাত ও কিরমানেও তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
খুরাসানের অংশবিশেষ তার সাম্রাজ্যের অঙ্গীভূত হয়। ১১৭৩ খ্রিষ্টাব্দে গিয়াসউদ্দিন তার ভাই মুইজউদ্দিনকে শিহাব উদ্দিন (ধর্মের অগ্নিশিখা) উপাধি দিয়ে গজনির শাসনভার অর্পণ করেন।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্র
(Sultan Muizuddin Muhammad Ghuri (1203-1206 AD): Foundation of the
Muslim Rule in North India)
মুহাম্মদ ঘুরীর প্রকৃত নাম মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ বিন সাম। তবে তিনি শিহাবউদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরী বা মুহাম্মদ ঘুরী নামে সমধিক পরিচিত।
মুহাম্মদ ঘুরী অনন্যসাধারণ সমর প্রতিভাধর ও ক্ষমতাবান শাসক ছিলেন। তার মধ্যে প্রবল উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকলেও বড় ভাই গিয়াস উদ্দিনের প্রতি তার আনুগত্য ছিল অকপট। তাই ভাইয়ের জীবদ্দশায় গজনির শাসনকর্তার পদ লাভেই সন্তুষ্ট থাকেন। ১২০৩ খ্রিষ্টাব্দে গিয়াস উদ্দিনের মৃত্যুর পর তিনি ঘাের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন।
অবশ্য গজনির শাসনকর্তা থাকা অবস্থায়ই তিনি রাজ্যজয়ে
মনােনিবেশ করেন এবং ভারত অভিযান শুরু করেন। তিনি তৃতীয় পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করে ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম স্থায়ী মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব অর্জন করেন। সংগত কারণেই ইতিহাসবিদগণ তাকে ভারতে মুসলিম
সাম্রাজোর প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা (The real Founder) নামে প্রভিহিত করেন।
রাজনৈতিক অবস্থা: মুহাম্মদ ঘুরীর আক্রমণের প্রাক্কালে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম বিশৃংখলা ও অরাজকতা বিরাজমান ছিল। সমগ্র ভারতে বেশকিছু ক্ষুদ্র রাজ্যের উদ্ভব ঘটে। এর মধ্যে উত্তর-পশ্চিম ভারতে তিনটি মুসলিম ও বেশ কয়েকটি রাজপুত রাজ্যের উপস্থিতি দেখা যায়। এগুলো হচ্ছেপাঞ্জাব: মুহাম্মদ ঘুরীর আক্ৰমণকালে পাঞ্জাব গজনি বংশের খসরু মালিকের শাসনাধীনে ছিল । সেলজুক তুর্কিদের হাতে গজনির পতনের পর খসরু মালিক পাঞ্জাবে আশ্রয় নেন এবং লাহােরকে রাজধানী করেন । ইন্দ্রীয়পরায়ণ ও অকর্মণ্য খসরু মালিককে পরাজিত করে মুহাম্মদ ঘুরী পাত্তাব জয় করেন।
মুলতান: মুলতান ছিল শিয়া কারামতিয়া মুসলিমদের শাসনাধীনে। সুলতান মাহমুদ সুলতান জয় করেন। তবে তার মৃত্যুর পর কারামতিয়া পুনরায় স্বাধীনতা ঘােষণা করে।
সিন্ধু: সুমরা নামক একটি স্থানীয় রাজবংশ সিন্ধু শাসন করছিল। সুমরারা ছিল শিয়া কারামতিয়া ধর্মমতের অনুসারী।
দিল্লি ও আজমির: মুহাম্মদ ঘুরীর আক্রমণের প্রাক্কালে দিল্লি ও অজমির ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী রাজ্য। রাজপুত চৌহান
রাজবংশ দিল্লি ও আলমির শাসন করত। চৌহান রাজা বিশালদেবের সময় হারাত্রেলী’ ও ‘ললিতা নিগ্রহ, রাজা' নামক
বিখ্যাত দুটি নাটক রচিত হয়েছিল ।
কনৌজঃ কনৌজ ছিল তদানীন্তন ভারতের অন্যতম শক্তিশালী রাজ্য। এ রাজ্যের রাজপুত শাসকগােষ্ঠী গহরওয়াল বংশ
প্রতিবেশী দিল্লি ও আজমির রাজ্যের চৌহান রাজপুতদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হিল ।
বুন্দেলখণ্ড: মুহাম্মদ ঘুরীর আক্রমণের প্রাক্কালে চান্দেলা বংশ স্বাধীন বুন্দেলখণ্ড রাজ্য শাসন করত। ঝাসি, অজয়গর,
কালিঞ্জার এবং মাহাবাে চান্দেলা বংশের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। পরমার্দি দেব দ্বিপেন এ বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ।
ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা
প্রথমত, এসময় ভারতে চরম রাজনৈতিক অনৈক্য এবং রাজন্যদের মধ্যে পরস্পর দ্বন্দ্ব ও কলহ বিরাজমান ছিল। দেশের
এ রাজনৈতিক অনৈক্য (Lack of Political Unity) নিঃসন্দেহে মুসলিম বাহিনীর সাফল্য ও হিন্দুদের ব্যর্থতার অন্যতম
গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল। ভি, ডি মহাজন যথার্থই বলেছেন, "There was no one paramount power in the country at
that time which could fight against the Muslims."
দ্বিতীয়ত, মুসলমানদের উন্নত সামরিক সংগঠন, আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র, শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা এবং ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন
অশ্বারােহী বাহিনী তাদের সাফল্যের অন্যতম কারণ। সৈনিক যােদ্ধা হিসেবে সমকালে রাজপুতদের বিশ্বজোড়া খ্যাতি
ছিল বটে, তবে তাদের ত্রুটিপূর্ণ অনুন্নত সামরিক সংগঠন, সনাতন যুদ্ধরীতি এবং একক নেতৃত্বের অভাব তাদের
ব্যর্থতার অন্যতম কারণে পরিণত হয়েছিল। তদুপরি তাদের মন্থরগতির হস্তিবাহিনী ক্ষিপ্রগতির অশ্বারােহী বাহিনীর
মােকাবিলায় অকার্যকর প্রমাণিত হয়। মুসলমানদের আগ্রাসী (Offensive) নীতি এবং হিন্দুদের আত্মরক্ষামূলক
(Defensive) রণনীতিও তাদের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন ।
তৃতীয়ত, ঈশ্বরী প্রসাদ রাজপুত এবং মুসলমানদের মধ্যকার যুদ্ধকে দুটি বিপরীতধর্মী সামাজিক শক্তির মধ্যকার সংঘাত
হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যার একটি হচ্ছে পুরােনাে অবক্ষয়ী এবং অন্যটি তারুণ্য উদ্দীপ্ত তেজস্বী ও উদ্যোগী । আর
তারুণ্য উদ্দীপ্ত নতুনের কাছে জরাগ্রস্ত পুরােনো অবক্ষয়ী শক্তির পতন অনিবার্য।
চতুর্থত, জাতি ও বর্ণভেদ প্রথা ভারতীয় হিন্দুদের মধ্যে প্রচণ্ড সামাজিক বৈষম্য তৈরি করেছিল। ফলে তাদের মধ্যে অভিন্ন জাতীয় চেতনা গড়ে ওঠেনি। অন্য দিকে ইসলামের সাম্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ মুসলমানরা
সংঘবদ্ধভাবে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ফলে তাদের বিজয় অনিবার্য হয়ে ওঠে।
পণমত, মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় প্রেরণা ও উদ্দীপনা তাদের সাফল্যের বিশেষ কারণ। মুসলিম যােদ্ধাদের নিকট হিন্দু
ভারতীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছিল ধর্মযুদ্ধস্বরূপ। এতে মৃত্যু হলে শহিদ হিসেবে পারলৌকিক মুক্তি আর বিজয়ী হলে গাজির
মর্যাদা প্রাপ্তির আশা তাদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। প্রতিপক্ষ হিন্দুদের সামনে এরূপ কোনাে প্রেরণা ছিল না।
তদুপরি ধনৈশ্বর্যে পরিপূর্ণ ভারতে প্রতিটি অভিযানে বিপুল গনিমত প্রাপ্তির প্রলােভন মুসলিম তুর্কি বাহিনীকে দুর্জেয় করে
তুলেছিল ।
ষষ্ঠত, মুসলমানদের ক্রীতদাস বাহিনী তাদের শক্তিকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছিল। মুসলমানদের মধ্যে কুতুবউদ্দিন
আইবেক, বখতিয়ার খলজির মতাে বহুসংখ্যক ক্রীতদাস সেনাপতির আবির্ভাব ঘটেছিল যারা তাদের প্রভুদের ন্যায়
রণক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে মুসলমানদের বিজয় ত্বরান্বিত করেছিলেন।
মুহাম্মদ ঘুরীর ভারত অভিযানের ফলাফল: মুহাম্মদ ঘুরীর ভারত অভিযানের ফলাফল ছিল সুদূর প্রসারী ।
১. মুহাম্মদ বিন কাসিম এবং সুলতান মাহমুদের বিজয়াভিযানের মাধ্যমে ভারতবর্ষে স্থায়ী মুসলিম শাসনের পথ তৈরি না হলেও মুহাম্মদ
ঘুরীর ভারত অভিযানের ফলে যে মুসলিম শাসনের সূত্রপাত হয়েছিল তা সুলতানি ও মুঘল শাসনামলে প্রসারিত হয়েছিল;
২, এ জয়ের ফলে ভারতে রাষ্ট্র হিসেবে ইসলামের যাত্রা শুরু হয়েছিল; ৩, এ সময় থেকে ভারতের আব্বাসীয় প্রশাসনের
আমলে স্থানীয়দের সমন্বয় করে যে প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তাই এতদঞ্চলের জনগণকে সাম্যভিত্তিক শাসনের সুবিধা প্রদান করেছিল এবং এ সাম্যের কারণেই নিম্নবর্ণের হিন্দুগণ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে;
৪. মুসলিম
বিজয়ের ফলে ভারতবর্ষের স্থানীয় উৎপাদনের সাথে শাসকবর্গের প্রয়ােজন মেটাতে আরব, পারস্য, তুর্কি, অঞ্চল থেকে
পণ্য সরবরাহ করতে শুরু হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের পুনরুজ্জীবন ঘটে এবং নানা শিল্পের বিকাশ ঘটে।
৫.
মুসলমানরা উন্নত জীবনধারা ও ফ্যাশনের প্রবর্তন করলে স্থানীয় কারিগর শ্রেণির জীবনমান উন্নত হতে থাকে; ৬. এ
জয়ের ফলেই ভারতে উন্নত মুসলিম শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটে এবং নতুন ধারার স্থাপত্য নির্মাণের সূত্রপাত ঘটে;
৭, এ জয়ের ফলে হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির সম্মিলন ঘটলে পরবর্তীতে এর পথ ধরেই নানা ধর্মভিত্তিক আন্দোলন প্রসারিত হয়েছিল।
একক কাজ : মুহাম্মদ ঘুরীর ভারত অভিযানে সফলতার কারণসমূহের একটি তালিকা তৈরি কর।
দ্বিতীয়ত, তাদের অভিযানের প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। ভারত জয় করে সেখানে স্থায়ী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা মাহমুদের লক্ষ্য ছিল না। ভারতের অগাধ ধনরত্ন ও ঐশ্বর্য সংগ্রহ করে গজনিকে সমৃদ্ধ করার বাসনায় তাড়িত হয়ে তিনি বার বার ভারত আক্রমণ করেন এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতাে সবকিছু তছনছ করে বিপুল পরিমাণ ধনরত্ন নিয়ে স্বদেশে ফিরে যান।
তৃতীয়ত, সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের পিছনে খানিকটা ধর্মীয় আবেগ ছিল বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন।
এমনকি তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে ধর্মকে ব্যবহার করেন বলেও অভিযােগ করা হয়। কিন্তু মুহাম্মদ ঘুরীর ক্ষেত্রে
ধর্মান্ধতার অভিযােগ নেই।
সমর প্রতিভা, জ্ঞান-গরিমা ও যশ খ্যাতির সার্বিক বিবেচনায় সুলতান মাহমুদ ইতিহাসে মুহাম্মদ ঘুরী অপেক্ষা খ্যাতিমান
ও শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন হয়ে আছেন সন্দেহ নেই। তবে ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাসে ঘুরীর অবদান সুলতান মাহমুদ অপেক্ষা অনেক বেশি।
দলীয় কাজ : সফল শাসক হিসেবে মুহাম্মদ ঘুরী ও সুলতান মাহমুদের কৃতিত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে একটি দলীয়
বিতর্কের আয়ােজন কর।
উপস্থিত বক্তৃতা: ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে বিভিন্ন শাসকদের অবদান সম্পর্কে উপস্থিত বক্তব্য।
(লটারির মাধ্যমে নির্বাচন)
খুরাসানের অংশবিশেষ তার সাম্রাজ্যের অঙ্গীভূত হয়। ১১৭৩ খ্রিষ্টাব্দে গিয়াসউদ্দিন তার ভাই মুইজউদ্দিনকে শিহাব উদ্দিন (ধর্মের অগ্নিশিখা) উপাধি দিয়ে গজনির শাসনভার অর্পণ করেন।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্র
সুলতান মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরী (১২০৩-১২০৬ খ্রি.): উত্তর ভারতে মুসলিম শাসনের প্রতিষ্ঠা
(Sultan Muizuddin Muhammad Ghuri (1203-1206 AD): Foundation of the
Muslim Rule in North India)
মুহাম্মদ ঘুরীর প্রকৃত নাম মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ বিন সাম। তবে তিনি শিহাবউদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরী বা মুহাম্মদ ঘুরী নামে সমধিক পরিচিত।
মুহাম্মদ ঘুরী অনন্যসাধারণ সমর প্রতিভাধর ও ক্ষমতাবান শাসক ছিলেন। তার মধ্যে প্রবল উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকলেও বড় ভাই গিয়াস উদ্দিনের প্রতি তার আনুগত্য ছিল অকপট। তাই ভাইয়ের জীবদ্দশায় গজনির শাসনকর্তার পদ লাভেই সন্তুষ্ট থাকেন। ১২০৩ খ্রিষ্টাব্দে গিয়াস উদ্দিনের মৃত্যুর পর তিনি ঘাের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন।
অবশ্য গজনির শাসনকর্তা থাকা অবস্থায়ই তিনি রাজ্যজয়ে
মনােনিবেশ করেন এবং ভারত অভিযান শুরু করেন। তিনি তৃতীয় পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করে ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম স্থায়ী মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব অর্জন করেন। সংগত কারণেই ইতিহাসবিদগণ তাকে ভারতে মুসলিম
সাম্রাজোর প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা (The real Founder) নামে প্রভিহিত করেন।
মুইজউদ্দিন মুহামদ ঘুরী মুহাম্মদ ঘুরীর আক্রমণের প্রাক্কালে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা (Political and Social Conditions of India at the eve of the expeditions of Muhammad Ghuri)
রাজনৈতিক অবস্থা: মুহাম্মদ ঘুরীর আক্রমণের প্রাক্কালে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম বিশৃংখলা ও অরাজকতা বিরাজমান ছিল। সমগ্র ভারতে বেশকিছু ক্ষুদ্র রাজ্যের উদ্ভব ঘটে। এর মধ্যে উত্তর-পশ্চিম ভারতে তিনটি মুসলিম ও বেশ কয়েকটি রাজপুত রাজ্যের উপস্থিতি দেখা যায়। এগুলো হচ্ছেপাঞ্জাব: মুহাম্মদ ঘুরীর আক্ৰমণকালে পাঞ্জাব গজনি বংশের খসরু মালিকের শাসনাধীনে ছিল । সেলজুক তুর্কিদের হাতে গজনির পতনের পর খসরু মালিক পাঞ্জাবে আশ্রয় নেন এবং লাহােরকে রাজধানী করেন । ইন্দ্রীয়পরায়ণ ও অকর্মণ্য খসরু মালিককে পরাজিত করে মুহাম্মদ ঘুরী পাত্তাব জয় করেন।
মুলতান: মুলতান ছিল শিয়া কারামতিয়া মুসলিমদের শাসনাধীনে। সুলতান মাহমুদ সুলতান জয় করেন। তবে তার মৃত্যুর পর কারামতিয়া পুনরায় স্বাধীনতা ঘােষণা করে।
সিন্ধু: সুমরা নামক একটি স্থানীয় রাজবংশ সিন্ধু শাসন করছিল। সুমরারা ছিল শিয়া কারামতিয়া ধর্মমতের অনুসারী।
দিল্লি ও আজমির: মুহাম্মদ ঘুরীর আক্রমণের প্রাক্কালে দিল্লি ও অজমির ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী রাজ্য। রাজপুত চৌহান
রাজবংশ দিল্লি ও আলমির শাসন করত। চৌহান রাজা বিশালদেবের সময় হারাত্রেলী’ ও ‘ললিতা নিগ্রহ, রাজা' নামক
বিখ্যাত দুটি নাটক রচিত হয়েছিল ।
কনৌজঃ কনৌজ ছিল তদানীন্তন ভারতের অন্যতম শক্তিশালী রাজ্য। এ রাজ্যের রাজপুত শাসকগােষ্ঠী গহরওয়াল বংশ
প্রতিবেশী দিল্লি ও আজমির রাজ্যের চৌহান রাজপুতদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হিল ।
বুন্দেলখণ্ড: মুহাম্মদ ঘুরীর আক্রমণের প্রাক্কালে চান্দেলা বংশ স্বাধীন বুন্দেলখণ্ড রাজ্য শাসন করত। ঝাসি, অজয়গর,
কালিঞ্জার এবং মাহাবাে চান্দেলা বংশের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। পরমার্দি দেব দ্বিপেন এ বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ।
ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা
প্রথমত, এসময় ভারতে চরম রাজনৈতিক অনৈক্য এবং রাজন্যদের মধ্যে পরস্পর দ্বন্দ্ব ও কলহ বিরাজমান ছিল। দেশের
এ রাজনৈতিক অনৈক্য (Lack of Political Unity) নিঃসন্দেহে মুসলিম বাহিনীর সাফল্য ও হিন্দুদের ব্যর্থতার অন্যতম
গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল। ভি, ডি মহাজন যথার্থই বলেছেন, "There was no one paramount power in the country at
that time which could fight against the Muslims."
দ্বিতীয়ত, মুসলমানদের উন্নত সামরিক সংগঠন, আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র, শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা এবং ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন
অশ্বারােহী বাহিনী তাদের সাফল্যের অন্যতম কারণ। সৈনিক যােদ্ধা হিসেবে সমকালে রাজপুতদের বিশ্বজোড়া খ্যাতি
ছিল বটে, তবে তাদের ত্রুটিপূর্ণ অনুন্নত সামরিক সংগঠন, সনাতন যুদ্ধরীতি এবং একক নেতৃত্বের অভাব তাদের
ব্যর্থতার অন্যতম কারণে পরিণত হয়েছিল। তদুপরি তাদের মন্থরগতির হস্তিবাহিনী ক্ষিপ্রগতির অশ্বারােহী বাহিনীর
মােকাবিলায় অকার্যকর প্রমাণিত হয়। মুসলমানদের আগ্রাসী (Offensive) নীতি এবং হিন্দুদের আত্মরক্ষামূলক
(Defensive) রণনীতিও তাদের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন ।
তৃতীয়ত, ঈশ্বরী প্রসাদ রাজপুত এবং মুসলমানদের মধ্যকার যুদ্ধকে দুটি বিপরীতধর্মী সামাজিক শক্তির মধ্যকার সংঘাত
হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যার একটি হচ্ছে পুরােনাে অবক্ষয়ী এবং অন্যটি তারুণ্য উদ্দীপ্ত তেজস্বী ও উদ্যোগী । আর
তারুণ্য উদ্দীপ্ত নতুনের কাছে জরাগ্রস্ত পুরােনো অবক্ষয়ী শক্তির পতন অনিবার্য।
চতুর্থত, জাতি ও বর্ণভেদ প্রথা ভারতীয় হিন্দুদের মধ্যে প্রচণ্ড সামাজিক বৈষম্য তৈরি করেছিল। ফলে তাদের মধ্যে অভিন্ন জাতীয় চেতনা গড়ে ওঠেনি। অন্য দিকে ইসলামের সাম্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ মুসলমানরা
সংঘবদ্ধভাবে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ফলে তাদের বিজয় অনিবার্য হয়ে ওঠে।
পণমত, মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় প্রেরণা ও উদ্দীপনা তাদের সাফল্যের বিশেষ কারণ। মুসলিম যােদ্ধাদের নিকট হিন্দু
ভারতীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছিল ধর্মযুদ্ধস্বরূপ। এতে মৃত্যু হলে শহিদ হিসেবে পারলৌকিক মুক্তি আর বিজয়ী হলে গাজির
মর্যাদা প্রাপ্তির আশা তাদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। প্রতিপক্ষ হিন্দুদের সামনে এরূপ কোনাে প্রেরণা ছিল না।
তদুপরি ধনৈশ্বর্যে পরিপূর্ণ ভারতে প্রতিটি অভিযানে বিপুল গনিমত প্রাপ্তির প্রলােভন মুসলিম তুর্কি বাহিনীকে দুর্জেয় করে
তুলেছিল ।
ষষ্ঠত, মুসলমানদের ক্রীতদাস বাহিনী তাদের শক্তিকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছিল। মুসলমানদের মধ্যে কুতুবউদ্দিন
আইবেক, বখতিয়ার খলজির মতাে বহুসংখ্যক ক্রীতদাস সেনাপতির আবির্ভাব ঘটেছিল যারা তাদের প্রভুদের ন্যায়
রণক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে মুসলমানদের বিজয় ত্বরান্বিত করেছিলেন।
মুহাম্মদ ঘুরীর ভারত অভিযানের ফলাফল: মুহাম্মদ ঘুরীর ভারত অভিযানের ফলাফল ছিল সুদূর প্রসারী ।
১. মুহাম্মদ বিন কাসিম এবং সুলতান মাহমুদের বিজয়াভিযানের মাধ্যমে ভারতবর্ষে স্থায়ী মুসলিম শাসনের পথ তৈরি না হলেও মুহাম্মদ
ঘুরীর ভারত অভিযানের ফলে যে মুসলিম শাসনের সূত্রপাত হয়েছিল তা সুলতানি ও মুঘল শাসনামলে প্রসারিত হয়েছিল;
২, এ জয়ের ফলে ভারতে রাষ্ট্র হিসেবে ইসলামের যাত্রা শুরু হয়েছিল; ৩, এ সময় থেকে ভারতের আব্বাসীয় প্রশাসনের
আমলে স্থানীয়দের সমন্বয় করে যে প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তাই এতদঞ্চলের জনগণকে সাম্যভিত্তিক শাসনের সুবিধা প্রদান করেছিল এবং এ সাম্যের কারণেই নিম্নবর্ণের হিন্দুগণ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে;
৪. মুসলিম
বিজয়ের ফলে ভারতবর্ষের স্থানীয় উৎপাদনের সাথে শাসকবর্গের প্রয়ােজন মেটাতে আরব, পারস্য, তুর্কি, অঞ্চল থেকে
পণ্য সরবরাহ করতে শুরু হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের পুনরুজ্জীবন ঘটে এবং নানা শিল্পের বিকাশ ঘটে।
৫.
মুসলমানরা উন্নত জীবনধারা ও ফ্যাশনের প্রবর্তন করলে স্থানীয় কারিগর শ্রেণির জীবনমান উন্নত হতে থাকে; ৬. এ
জয়ের ফলেই ভারতে উন্নত মুসলিম শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটে এবং নতুন ধারার স্থাপত্য নির্মাণের সূত্রপাত ঘটে;
৭, এ জয়ের ফলে হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির সম্মিলন ঘটলে পরবর্তীতে এর পথ ধরেই নানা ধর্মভিত্তিক আন্দোলন প্রসারিত হয়েছিল।
একক কাজ : মুহাম্মদ ঘুরীর ভারত অভিযানে সফলতার কারণসমূহের একটি তালিকা তৈরি কর।
ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা
প্রথমত, ব্যক্তিগত শৌর্যবীর্য ও রণনৈপুণ্যে মাহমুদ ও ঘুরীর বিশেষ খ্যাতি ছিল।
তবে সেনাপতি ও সমরনায়ক হিসেবে মাহমুদ অধিকতর সফল ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ছিলেন। তিনি ছিলেন অপরাজেয় বিজেতা। মধ্য এশিয়া বা ভারত অভিযানসমূহে তাকে কখনও পরাজয়ের গ্লানি বরণ করতে হয়নি। অন্যদিকে মুহাম্মদ ঘুরী গুজরাট, তরাইনের প্রথম যুদ্ধ এবং মধ্য এশিয়ার সংঘর্ষে পরাজয়বরণ করেন।
দ্বিতীয়ত, তাদের অভিযানের প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। ভারত জয় করে সেখানে স্থায়ী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা মাহমুদের লক্ষ্য ছিল না। ভারতের অগাধ ধনরত্ন ও ঐশ্বর্য সংগ্রহ করে গজনিকে সমৃদ্ধ করার বাসনায় তাড়িত হয়ে তিনি বার বার ভারত আক্রমণ করেন এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতাে সবকিছু তছনছ করে বিপুল পরিমাণ ধনরত্ন নিয়ে স্বদেশে ফিরে যান।
অন্যদিকে মুহাম্মদ ঘুরী হিলেন বাস্তববাদী দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক। শুধু ভারতের ধনসম্পদ কুক্ষিগত করা নয়,
সেখানে স্থায়ী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তার মুখ্য উদ্দেশ্য।
সেখানে স্থায়ী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তার মুখ্য উদ্দেশ্য।
বলা আবশ্যক যে, ঘুরী সুলতান মাহমুদ অপেক্ষা অধিকতর কুশলী ছিলেন। তিনি তদানীন্তন ভারতের দুর্বলতা ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার পূর্ণ সুযােগ গ্রহণ করেন এবং ভারতে স্থায়ী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বাস্তবায়নে সফল হন।
তৃতীয়ত, সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের পিছনে খানিকটা ধর্মীয় আবেগ ছিল বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন।
এমনকি তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে ধর্মকে ব্যবহার করেন বলেও অভিযােগ করা হয়। কিন্তু মুহাম্মদ ঘুরীর ক্ষেত্রে
ধর্মান্ধতার অভিযােগ নেই।
তিনি ধর্মনিষ্ঠ ছিলেন সত্য, তবে ধর্মান্ধ ছিলেন না। ধর্ম তার রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিকে
আচ্ছাদিত করতে পারেনি।
উভয় শাসকই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্পকলার অনুরাগী ছিলেন। তবে শিল্প, সংস্কৃতিচর্চা ও পৃষ্ঠপোষকতায় মাহমুদ
চতুর্থত,
ঘুরী অপেক্ষা অনেক বেশি সফল ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ছিলেন।
আচ্ছাদিত করতে পারেনি।
উভয় শাসকই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্পকলার অনুরাগী ছিলেন। তবে শিল্প, সংস্কৃতিচর্চা ও পৃষ্ঠপোষকতায় মাহমুদ
চতুর্থত,
ঘুরী অপেক্ষা অনেক বেশি সফল ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ছিলেন।
সমর প্রতিভা, জ্ঞান-গরিমা ও যশ খ্যাতির সার্বিক বিবেচনায় সুলতান মাহমুদ ইতিহাসে মুহাম্মদ ঘুরী অপেক্ষা খ্যাতিমান
ও শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন হয়ে আছেন সন্দেহ নেই। তবে ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাসে ঘুরীর অবদান সুলতান মাহমুদ অপেক্ষা অনেক বেশি।
ভারতে আক্রমণকারী হিসেবে নয় বরং স্থায়ী মুসলিম সাম্রাজ্যের স্থপতি হিসেবে মুহাম্মদ
ঘুরীর নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
on (Fall of the Ghuri Dynasty)
মুহাম্মদ ঘুরী অপুত্রক ছিলেন।
ঘুরীর নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
on (Fall of the Ghuri Dynasty)
মুহাম্মদ ঘুরী অপুত্রক ছিলেন।
১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে ঘুরীর মৃত্যুর পর তার ভ্রাতুষ্পুত্র মাহমুদ ঘুরী সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন।
তিনি ছিলেন অত্যন্ত দুর্বল ও অযােগ্য শাসক। তাঁর দুর্বলতার সুযােগে মুহাম্মদ ঘুরীর সহযােগী তাজউদ্দিন ইয়ালদুজ গজনিতে, নাসিরউদ্দিন কুবাচা সিন্ধুতে এবং কুতুবউদ্দিন আইবেক দিল্লিতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি ছিলেন অত্যন্ত দুর্বল ও অযােগ্য শাসক। তাঁর দুর্বলতার সুযােগে মুহাম্মদ ঘুরীর সহযােগী তাজউদ্দিন ইয়ালদুজ গজনিতে, নাসিরউদ্দিন কুবাচা সিন্ধুতে এবং কুতুবউদ্দিন আইবেক দিল্লিতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।
দুর্বলচিত্ত মাহমুদ ঘুরীর পক্ষে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। তদুপরি তার মৃত্যুর পর সিংহাসনকে কেন্দ্র করে যে গৃহবিবাদ শুরু হয়, সে সুযােগে খাওয়ারিযম শাহ ঘােররাজ্য অধিকার করে নেন। ফলে ঘুরী বংশের শাসনের অবসান ঘটে।
দলীয় কাজ : সফল শাসক হিসেবে মুহাম্মদ ঘুরী ও সুলতান মাহমুদের কৃতিত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে একটি দলীয়
বিতর্কের আয়ােজন কর।
উপস্থিত বক্তৃতা: ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে বিভিন্ন শাসকদের অবদান সম্পর্কে উপস্থিত বক্তব্য।
(লটারির মাধ্যমে নির্বাচন)