পাঠ-৮–১৭
and Achievements)
গজনি রাজবংশ ও সুলতান মাহমুদ
অষ্টম শতাব্দীর শুরুতে আরবদের সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষে
মুসলিম আধিপত্যের সূচনা হয়।
আরব বিজয়ের প্রায় তিনশ’ বছর পর মুসলমানদের
দ্বিতীয় পর্যায়ে ভারত অভিযান শুরু হয়। এ পর্যায়ে অভিযানের প্রধান নায়ক গজনির
তুর্কি বীর সুলতান মাহমুদ। আব্বাসি রাজবংশের দুর্বলতার সুযােগে যে সকল
রাজবংশের শাসনের সূচনা হয়েছিল সেগুলাের মধ্যে সামানিদ বংশ অন্যতম।
এই সামানি বংশের একজন দাস ছিলেন আলপ্তগীন। আলপ্তগীন তার পৃষ্ঠপােষক
সামানি শাসনকর্তা আবদুল মালিকের মৃত্যুর পর সসৈন্যে আফগানিস্তানে উপস্থিত
হন এবং গজনিতে একটি স্বাধীন রাজবংশের গােড়াপত্তন করেন। এ রাজবংশটিই
ইসলামের ইতিহাসে ‘গজনি রাজবংশ' নামে পরিচিত।
গজনি রাজবংশ ১১৮৬ সুলতান মাহমুদখ্রি ষ্টাব্দ পর্যন্ত শাসন পরিচালনা করে এবং এ বংশই আরবদের পর নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ভারতবর্ষে
সামরিক অভিযান পরিচালনা করে ।
নিচে গজনি শাসকদের বংশের তালিকা ছকের মাধ্যমে দেখানাে হলাে:
গজনি বংশের তালিকা (৯৭৭ - ১১৮৬)
১. সবুক্তগীন
২. মাহমুদ
ইসমাঈল
৩, মুহাম্মদ
৪, মাসুদ (১ম)
৮. আবদুর রশিদ
মাজদুদ
৫. মাওদুদ
| ৭. আবুল হাসান আলী
৯, ফাররুখজাদ
১০, ইব্রাহিম
১১, মাসুদ (৩য়)।
৬. মাসুদ (২য়)
মাহমুদ
মনসুর
১২. শেরজাদা।
১৩. আরসালান
১৪. বাহরাম শাহ
১৫. খসরু শাহ
১৬. খসরু মালিক।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্র ১৬
সুলতান মাহমুদের পরিচিতি ও ক্ষমতা লাভ: পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, আলপ্তগীন ছিলেন গজনি রাজবংশের
বংশকর্তা।
১৪ বছর রাজত্বের পর ৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে আলপ্তগীন মৃত্যুবরণ করলে তাঁর পুত্র আবু ইসহাক গজনির সিংহাসনে
অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু এক বছর রাজত্বের পর আবু ইসহাক মৃত্যুবরণ করেন। অতঃপর আলপ্তগীনের ক্রীতদাস ও জামাতা
সবুক্তগীন গজনির সিংহাসনে আরােহণ করেন। সবুক্তগীন ছিলেন সুযােগ্য শাসক। তার বিশ বছরের রাজত্বকালে (৯৭৭-
৯৯৭ খ্রি.) গজনি রাজ্যের সংহতি বিধান এবং এর সীমানা সম্প্রসারণ করে ইতিহাসে নিজের স্থায়ী আসন নিশ্চিত
করেন।
আমির সবুক্তগীন ৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি পুত্র ইসমাঈলকে উত্তরাধিকারী নিযুক্ত
করেন। কিন্তু তার জ্যেষ্ঠ পুত্র মাহমুদ এ মনােনয়ন মেনে নিতে পারেননি। ফলে সিংহাসনকে কেন্দ্র করে দু'ভাইয়ের
মধ্যে সংঘাত শুরু হয়।
এ সংঘাতে মাহমুদের নিকট ইসমাঈল পরাজিত হন। মাহমুদ ইসমাঈলকে কারারুদ্ধ ও নির্বাসন
- দিয়ে ৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে ২৬ বছর বয়সে গজনির সিংহাসনে আরােহণ করেন। সুলতান মাহমুদ গজনি সুলতানদের মধ্যে
কেবল শ্রেষ্ঠতমই ছিলেন না সমসাময়িক নৃপতিদের মধ্যেও তিনি ছিলেন সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী।
প্রাথমিক কার্যাবলি: সুলতান মাহমুদ ছিলেন প্রতিভাবান ও বিচক্ষণ শাসক।
সিংহাসনে আরােহণের পূর্বেই তিনি
সমরবিদ্যা, শাসনপদ্ধতি এবং রাজনীতি সম্পর্কে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেন। আমির বুক্তগীন সামানিদ
শাসকদের কাছ থেকে খােরাসান জয় করে পুত্র মাহমুদকে সেখানকার শাসনকর্তা নিয়ােগ করেছিলেন। মাহমুদ
খােরাসানের শাসনকর্তা হিসেবে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। সিংহাসনে আরােহণ করে তিনি বিদ্রোহী গােত্রগুলােকে দমন
করে নিজের অবস্থান সুসংহত করেন। আইনগতভাবে গজনির শাসকগণ তখনাে সামানিদদের আনুগত্যাধীনে ছিলেন।
গজনির মসনদে আরােহণের পর সামানিদের কেন্দ্রীয় শক্তির অবক্ষয় ও দুর্বলতার সুযোগে মাহমুদ তাদের আনুগত্য
অস্বীকার করে পূর্ণ স্বাধীনতা ঘােষণা করেন এবং পূর্বসূরিদের ব্যবহৃত ‘আমির’ পদবি ত্যাগ করে ‘সুলতান’ পদবি গ্রহণ
করেন। তিনি সমসাময়িক আব্বাসি খলিফা কাদির বিল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করেন। খলিফা তাকে ‘ইয়ামিন উদ-দৌলা
(সম্রাটের দক্ষিণ হাত) ও 'আমিন-উল-মিল্লাত' (ধর্ম বিশ্বাসের রক্ষক) উপাধি দ্বারা সম্মানিত করেন । এজন্য গজনি বংশ
ইয়ামিনি বংশ' নামেও পরিচিত।
সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান: কারণ বা উদ্দেশ্য (Sultan Mahmud's Expeditions
to India: Causes or Intentions)
সুলতান মাহমুদ ছিলেন সাহসী ও সমরপ্রিয় । ১০০০ থেকে ১০২৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কম করে হলেও তিনি ১৭ বার ভারত
আক্রমণ করেন। লক্ষণীয় যে, সুলতান মাহমুদ ভারতের বিরুদ্ধে পরিচালিত সতেরােটি অভিযানেই বিস্ময়করভাবে
জয়লাভ করেন।
তবে একমাত্র পাঞ্জাব ব্যতীত বিজিত আর কোনাে অঞ্চলকে সাম্রাজ্যভুক্ত না করায় তার ভারত অভিযানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ ঐকমত্যে উপনীত হতে পারেননি। কারও কারও মতে, 'সুলতান মাহমুদ ছিলেন একজন গোঁড়া ধর্ম প্রচারক। হিন্দু দেব-দেবীর মন্দির ও বিগ্রহাদি ধ্বংস করে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি ভারত অভিযান করেছিলেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন তিনি ছিলেন অর্থলােভী একজন দস্যু সর্দার। ভারতের।
বিপুল ধনৈশ্বর্যে প্রলুব্ধ হয়ে তিনি আসেন, পােড়ান, মারেন, লুটপাট করেন, অধিকার করেন এবং চলে যান। কারাে কারাে অভিমত বীরযােদ্ধ উচ্চাভিলাষী বিজেতার আকাঙ্ক্ষা পূরণের উদ্দেশ্যেই সুলতান মাহমুদ বারবার ভারত আক্রমণ করেন ঐতিহাসিকদের এরূপ পরস্পরবিরােধী মতামতের পটভূমিতে সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের প্রকৃত কারণ।
গজনির সুলতান মাহমুদ: সামরিক অভিযান, চরিত্র ও কৃতিত্ব (Sultan Mahmud of
Ghazni: His Military Expeditions, Characterand Achievements)
গজনি রাজবংশ ও সুলতান মাহমুদ
অষ্টম শতাব্দীর শুরুতে আরবদের সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষে
মুসলিম আধিপত্যের সূচনা হয়।
আরব বিজয়ের প্রায় তিনশ’ বছর পর মুসলমানদের
দ্বিতীয় পর্যায়ে ভারত অভিযান শুরু হয়। এ পর্যায়ে অভিযানের প্রধান নায়ক গজনির
তুর্কি বীর সুলতান মাহমুদ। আব্বাসি রাজবংশের দুর্বলতার সুযােগে যে সকল
রাজবংশের শাসনের সূচনা হয়েছিল সেগুলাের মধ্যে সামানিদ বংশ অন্যতম।
এই সামানি বংশের একজন দাস ছিলেন আলপ্তগীন। আলপ্তগীন তার পৃষ্ঠপােষক
সামানি শাসনকর্তা আবদুল মালিকের মৃত্যুর পর সসৈন্যে আফগানিস্তানে উপস্থিত
হন এবং গজনিতে একটি স্বাধীন রাজবংশের গােড়াপত্তন করেন। এ রাজবংশটিই
ইসলামের ইতিহাসে ‘গজনি রাজবংশ' নামে পরিচিত।
গজনি রাজবংশ ১১৮৬ সুলতান মাহমুদখ্রি ষ্টাব্দ পর্যন্ত শাসন পরিচালনা করে এবং এ বংশই আরবদের পর নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ভারতবর্ষে
সামরিক অভিযান পরিচালনা করে ।
নিচে গজনি শাসকদের বংশের তালিকা ছকের মাধ্যমে দেখানাে হলাে:
গজনি বংশের তালিকা (৯৭৭ - ১১৮৬)
১. সবুক্তগীন
২. মাহমুদ
ইসমাঈল
৩, মুহাম্মদ
৪, মাসুদ (১ম)
৮. আবদুর রশিদ
মাজদুদ
৫. মাওদুদ
| ৭. আবুল হাসান আলী
৯, ফাররুখজাদ
১০, ইব্রাহিম
১১, মাসুদ (৩য়)।
৬. মাসুদ (২য়)
মাহমুদ
মনসুর
১২. শেরজাদা।
১৩. আরসালান
১৪. বাহরাম শাহ
১৫. খসরু শাহ
১৬. খসরু মালিক।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্র ১৬
সুলতান মাহমুদের পরিচিতি ও ক্ষমতা লাভ: পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, আলপ্তগীন ছিলেন গজনি রাজবংশের
বংশকর্তা।
১৪ বছর রাজত্বের পর ৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে আলপ্তগীন মৃত্যুবরণ করলে তাঁর পুত্র আবু ইসহাক গজনির সিংহাসনে
অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু এক বছর রাজত্বের পর আবু ইসহাক মৃত্যুবরণ করেন। অতঃপর আলপ্তগীনের ক্রীতদাস ও জামাতা
সবুক্তগীন গজনির সিংহাসনে আরােহণ করেন। সবুক্তগীন ছিলেন সুযােগ্য শাসক। তার বিশ বছরের রাজত্বকালে (৯৭৭-
৯৯৭ খ্রি.) গজনি রাজ্যের সংহতি বিধান এবং এর সীমানা সম্প্রসারণ করে ইতিহাসে নিজের স্থায়ী আসন নিশ্চিত
করেন।
আমির সবুক্তগীন ৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি পুত্র ইসমাঈলকে উত্তরাধিকারী নিযুক্ত
করেন। কিন্তু তার জ্যেষ্ঠ পুত্র মাহমুদ এ মনােনয়ন মেনে নিতে পারেননি। ফলে সিংহাসনকে কেন্দ্র করে দু'ভাইয়ের
মধ্যে সংঘাত শুরু হয়।
এ সংঘাতে মাহমুদের নিকট ইসমাঈল পরাজিত হন। মাহমুদ ইসমাঈলকে কারারুদ্ধ ও নির্বাসন
- দিয়ে ৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে ২৬ বছর বয়সে গজনির সিংহাসনে আরােহণ করেন। সুলতান মাহমুদ গজনি সুলতানদের মধ্যে
কেবল শ্রেষ্ঠতমই ছিলেন না সমসাময়িক নৃপতিদের মধ্যেও তিনি ছিলেন সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী।
প্রাথমিক কার্যাবলি: সুলতান মাহমুদ ছিলেন প্রতিভাবান ও বিচক্ষণ শাসক।
সিংহাসনে আরােহণের পূর্বেই তিনি
সমরবিদ্যা, শাসনপদ্ধতি এবং রাজনীতি সম্পর্কে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেন। আমির বুক্তগীন সামানিদ
শাসকদের কাছ থেকে খােরাসান জয় করে পুত্র মাহমুদকে সেখানকার শাসনকর্তা নিয়ােগ করেছিলেন। মাহমুদ
খােরাসানের শাসনকর্তা হিসেবে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। সিংহাসনে আরােহণ করে তিনি বিদ্রোহী গােত্রগুলােকে দমন
করে নিজের অবস্থান সুসংহত করেন। আইনগতভাবে গজনির শাসকগণ তখনাে সামানিদদের আনুগত্যাধীনে ছিলেন।
গজনির মসনদে আরােহণের পর সামানিদের কেন্দ্রীয় শক্তির অবক্ষয় ও দুর্বলতার সুযোগে মাহমুদ তাদের আনুগত্য
অস্বীকার করে পূর্ণ স্বাধীনতা ঘােষণা করেন এবং পূর্বসূরিদের ব্যবহৃত ‘আমির’ পদবি ত্যাগ করে ‘সুলতান’ পদবি গ্রহণ
করেন। তিনি সমসাময়িক আব্বাসি খলিফা কাদির বিল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করেন। খলিফা তাকে ‘ইয়ামিন উদ-দৌলা
(সম্রাটের দক্ষিণ হাত) ও 'আমিন-উল-মিল্লাত' (ধর্ম বিশ্বাসের রক্ষক) উপাধি দ্বারা সম্মানিত করেন । এজন্য গজনি বংশ
ইয়ামিনি বংশ' নামেও পরিচিত।
সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান: কারণ বা উদ্দেশ্য (Sultan Mahmud's Expeditions
to India: Causes or Intentions)
সুলতান মাহমুদ ছিলেন সাহসী ও সমরপ্রিয় । ১০০০ থেকে ১০২৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কম করে হলেও তিনি ১৭ বার ভারত
আক্রমণ করেন। লক্ষণীয় যে, সুলতান মাহমুদ ভারতের বিরুদ্ধে পরিচালিত সতেরােটি অভিযানেই বিস্ময়করভাবে
জয়লাভ করেন।
তবে একমাত্র পাঞ্জাব ব্যতীত বিজিত আর কোনাে অঞ্চলকে সাম্রাজ্যভুক্ত না করায় তার ভারত অভিযানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ ঐকমত্যে উপনীত হতে পারেননি। কারও কারও মতে, 'সুলতান মাহমুদ ছিলেন একজন গোঁড়া ধর্ম প্রচারক। হিন্দু দেব-দেবীর মন্দির ও বিগ্রহাদি ধ্বংস করে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি ভারত অভিযান করেছিলেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন তিনি ছিলেন অর্থলােভী একজন দস্যু সর্দার। ভারতের।
বিপুল ধনৈশ্বর্যে প্রলুব্ধ হয়ে তিনি আসেন, পােড়ান, মারেন, লুটপাট করেন, অধিকার করেন এবং চলে যান। কারাে কারাে অভিমত বীরযােদ্ধ উচ্চাভিলাষী বিজেতার আকাঙ্ক্ষা পূরণের উদ্দেশ্যেই সুলতান মাহমুদ বারবার ভারত আক্রমণ করেন ঐতিহাসিকদের এরূপ পরস্পরবিরােধী মতামতের পটভূমিতে সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের প্রকৃত কারণ।