ভারত বর্ষে, মুসলিম দিল্লি সালতানাত যুগ টিকে ছিল (১২০৬-১৫২৬ খ্রি.) পর্যন্ত। এর পরেই মুসলিম মুঘল শাসন শুরু হয়েছিল, যা (১৫২৬-১৮৫৮ খ্রি.) পর্যন্ত টিকে ছিলো।
গজনির সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে কুতুবউদ্দিন আইবেকের স্বাধীন ও সার্বভৌম শাসক হিসেবে দিল্লির সিংহাসনে আরােহণের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষে সুলতানি শাসন শুরু হয়। তিনশ বছরেরও অধিক সময় রাজত্বের পর ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে সুলতান ইব্রাহিম লােদীর পরাজয়ের মধ্য দিয়ে দিল্লি সালতানাতের পতন ঘটে।
পতনের কারন (Causes of the Downfall)
অভ্যন্তরীণ কারণ (Internal Causes)
ব্যক্তিনির্ভর একনায়কত্বের প্রতিক্রিয়া: দিল্লি সালতানাত ছিল ব্যক্তিনির্ভর একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসন। এতে সমগ্র ক্ষমতার উৎস ছিলেন স্বয়ং সুলতান। সুলতানের নিজস্ব ক্ষমতার ওপর সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব ও স্থিতিশীলতা নির্ভরশীল ছিল।
সুলতান শক্তিমান ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হলে সাম্রাজ্যে সুশাসনসহ সর্বত্র নিয়মশৃঙ্খলা বজায় থাকত। অন্যদিকে, সুলতান ব্যক্তিত্বহীন ও দূর্বল হলে সাম্রাজ্যে অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠত। রূঢ় হলেও সত্য যে দিল্লি সালতানাতের তিনশ বছরের শাসনকালে সুলতান ইলতুৎমিশ, গিয়াস উদ্দিন বলবন, আলাউদ্দিন খলজি এবং মুহাম্মদ বিন তুঘলক ছাড়া প্রায় সকল সুলতানই ছিলেন অকর্মণ্য, দুর্বল ও অযােগ্য।
নৈতিক অবক্ষয়: দিল্লি সালতানাতের শেষ পর্বের অধিকাংশ সলতান এমনকি অভিজাতগণও রাজ্য শাসন অপেক্ষা বিলাস- ব্যসনে বেশি মত্ত থাকতেন। অতিরিক্ত মদ্যপান, ব্যভিচার ও দুর্নীতি তাদের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতাকে নষ্ট করে দিয়েছিল
ফলে তারা সাম্রাজ্যের সুশাসন বা এর সংহতি ধরে রাখতে ব্যর্থ হন।
ব্রটিপূর্ণ শাসননীতি: কোনাে কোনাে সুলতানের ত্রুটিপূর্ণ শাসননীতি দিল্লি সালতানাতের পতনের অন্যতম কারণ হিল যেমন মুহাম্মদ বিন তুঘলকের অবাস্তব উচ্চাভিলাষী মহাপরিকল্পনা এবং সুলতান ফিরােজ শাহের উদার শাসননীতি ইত্যাদি।
বৈদেশিক কারণ (External Causes)
মােজ্গল আক্রমণ: গােটা সুলতানি শাসনামলে সাম্রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে অসংখ্যবার মােজালগণ ভারত
আক্রমণ করেছে। তাদের আক্রমণে অনেক জনপদ ধ্বংস হয়েছে এবং লুণ্ঠনে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। তদুপার মােজাল আক্রমণ প্রতিহত করতে সুলতানদের ব্যতিব্যস্ত থাকার ফলে সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও সাম্রাভয সুদৃঢ়করণের কাজ ব্যাহত হয়েছে।
তৈমুর লঙের আক্রমণ: নানা কারণে দিল্नি সালতানাত যখন পতনােম্মখ ঠিক সেই সময় মধ্য এশিয়ার দুরধর্য সমরনেতা আমির তৈমুর লঙ ভারত আব্রমণ করেন (১৩৯৮-৯৯ খ্রি.)। তাঁর বর্ণনাতীত নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও লুণ্ঠন দিল্লি সালতানাতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়।
বাবরের আক্রমণ ও সালতানাতের পতন: লােদী বংশের শেষ সুলতান ইব্রাহিম লােদীর প্রশাসনিক দুর্বলতা, তার
ঔম্বত্যপূর্ণ আচরণ ও আফগান আমিরদের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি খর্ব করার প্রচেষ্টায় কায়েমী স্বার্থান্বেষী অভিজাতবর্গ সুলতানের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছিল। এ অবস্থায় পাঞ্জাবের উচ্চাভিলাষী শাসনকর্তা দৌলত খান লােদী ও সিংহাসন প্রত্যাশী আলম খান লােদী কাবুল অধিপতি বাবুরকে দিল্লি আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান। গৃহদাহে জর্জারত দিল়লি সালতানাতের তদানীন্তন পরিস্থিতিতে ভাগ্যান্বেষী বাবুর সাফল্যের নিশ্চিত সম্ভাবনা দেখতে পান।
দিল্লি সালতানাতের পতন - ইসলামের ইতিহাস (Gradual Decline and Fall of the Delhi Sultanate)
দিল্লি সালতানাতের পতন |
গজনির সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে কুতুবউদ্দিন আইবেকের স্বাধীন ও সার্বভৌম শাসক হিসেবে দিল্লির সিংহাসনে আরােহণের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষে সুলতানি শাসন শুরু হয়। তিনশ বছরেরও অধিক সময় রাজত্বের পর ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে সুলতান ইব্রাহিম লােদীর পরাজয়ের মধ্য দিয়ে দিল্লি সালতানাতের পতন ঘটে।
সালতানাত যুগে ৫টি রাজবংশ শাসন করে। সুলতানি আমলে ভারতে মুসলিম আধিপত্য বিস্তার লাভ করে
এবং দাক্ষিণাত্যের দ্বারসমুদ্র পর্যন্ত মুসলিম বিজয় ও অধিকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তবে কোনাে শাসন ক্ষমতাই চিরস্থায়ী নয়।
এবং দাক্ষিণাত্যের দ্বারসমুদ্র পর্যন্ত মুসলিম বিজয় ও অধিকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তবে কোনাে শাসন ক্ষমতাই চিরস্থায়ী নয়।
প্রকৃতির বিধান অনুযায়ী উত্থানের পর পতন অনিবার্য। দিল্লি সালতানাতের ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হয়নি। বস্তুত
তুঘলক বংশের পতনের মধ্য দিয়ে দিল্লি সালতানাতের ক্রমাবনতি ও পতন প্রক্রিয়া শুরু হয়। সৈয়দ বংশের শাসনামলে পতন প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হয় এবং লােদী শাসনের অবসানের মধ্য দিয়ে দিল্লি সালতানাতের চূড়ান্ত যবনিকাপাত ঘটে।
তুঘলক বংশের পতনের মধ্য দিয়ে দিল্লি সালতানাতের ক্রমাবনতি ও পতন প্রক্রিয়া শুরু হয়। সৈয়দ বংশের শাসনামলে পতন প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হয় এবং লােদী শাসনের অবসানের মধ্য দিয়ে দিল্লি সালতানাতের চূড়ান্ত যবনিকাপাত ঘটে।
পতনের কারন (Causes of the Downfall)
অভ্যন্তরীণ কারণ (Internal Causes)
ব্যক্তিনির্ভর একনায়কত্বের প্রতিক্রিয়া: দিল্লি সালতানাত ছিল ব্যক্তিনির্ভর একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসন। এতে সমগ্র ক্ষমতার উৎস ছিলেন স্বয়ং সুলতান। সুলতানের নিজস্ব ক্ষমতার ওপর সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব ও স্থিতিশীলতা নির্ভরশীল ছিল।
সুলতান শক্তিমান ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হলে সাম্রাজ্যে সুশাসনসহ সর্বত্র নিয়মশৃঙ্খলা বজায় থাকত। অন্যদিকে, সুলতান ব্যক্তিত্বহীন ও দূর্বল হলে সাম্রাজ্যে অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠত। রূঢ় হলেও সত্য যে দিল্লি সালতানাতের তিনশ বছরের শাসনকালে সুলতান ইলতুৎমিশ, গিয়াস উদ্দিন বলবন, আলাউদ্দিন খলজি এবং মুহাম্মদ বিন তুঘলক ছাড়া প্রায় সকল সুলতানই ছিলেন অকর্মণ্য, দুর্বল ও অযােগ্য।
ব্যক্তিনির্ভর একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসন ব্যবস্থায় এসব দুর্বল সুলতানদের শাসনামলে সাম্রাজ্যের সর্বত্র বিদ্রোহ, বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতি প্রকট আকার
অযােগ্য, ধারণ করে। পরিণামে দিল্লি সালতানাতের পতন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
অযােগ্য, ধারণ করে। পরিণামে দিল্লি সালতানাতের পতন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয়।
কেন্দ্রায় শাসনের শৈথিল্য: কেন্দ্রীয় শাসনের শৈথিল্য দিল্লি সালতানাতের পতনের অন্যতম কারণ ছিল। বিশাল দিলি
সালিতানাতে প্রদেশগুলাের ওপর কেন্দ্রীয় শাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা জররি ছিল। কিন্তু দীর্ঘ সুলতানি শাসনের ইতিহাসে
সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবন এবং আলাউদ্দিন খলজি প্রমখ কয়েকজন ছাড়া আর কোনাে সুলতান এ ব্যাপারে কার্যকর
ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
প্রাদেশিক শাসনের দুর্বলতা: প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ ছিলেন নিজ নিজ প্রদেশের সর্বময়কর্তা। প্রাদেশিক সেনাবাহিনী ও
রাজস্বব্যবস্থা তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কেন্দ্রীয় শাসনের দূর্বলতা ও শিথিলতার সুযােগে প্রদেশপালগণ প্রায়ই স্বাধীনতা
ঘােষণা করতেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি প্রাদেশিক সরকারের আনুগতে্যের অভাব এবং কেন্দ্রবিমুখী প্রবণতা দিল্লি
সালতানাতের পতনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
সুষ্ঠু উত্তরাধিকারী নীতির অভাব: দিল্লি সালতানাতে উত্তরাধিকারের সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট ও সুপ্রতিষ্ঠিত কোনাে নীতিমালা
ছিল না। শুধু সুলতান নয়, অভিজাতগণও উত্তরাধিকার বা সুলতান মনােনয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতেন।
রাজতান্ত্রিক
ঐতিহ্য অনুসারে জ্যেষ্ঠপুত্রের অধিকার সবসময় স্বীকৃতি পায়নি। ফলে সুলতানদের বৃদ্ধাবস্থায় বা মৃত্যুর পর একাধিক
পুত্র বা নিকটাত্মীয়দের মধ্যে সিংহাসনের দাবি নিয়ে দ্বন্দ্ব, গৃহ-বিবাদ, অন্তর্কলহ, বিদ্র্রোহ-বিশৃঙ্খলা ও হত্যাকাণ্ড
সুলতানি যুগের শেষদিকে মারাত্মক রূপ পরিগ্রহ করে যা পরিণামে সুলতানি শাসনের ভিত্তিকে দূর্বল করে ফেলে।
সামরিক বাহিনীর দুর্বলতা: জনসমর্থন বা জনগণের স্বাভাবিক আনুগত্যের ওপর নয় সুলতানি শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল সামরিক শক্তির ওপর। সামরিক বাহিনীর কর্মক্ষমতা ও শক্তিমত্তার ওপর সাম্রাজ্যের স্থায়িত্বের বিষয়টি জড়িত ছিল।
কিন্তু সুলতানি যুগে সব সময় সেনাবাহিনীর শক্তিমত্তাকে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। সেনাবাহিনীর কর্মকুশলতা রক্ষা
এবং তাদের দুর্নীতিমুক্ত রাখার লক্ষ্যে আলাউদ্দিন খলজি সেনাবাহিনী থেকে জায়গির প্রথার উচ্ছেদসহ নানা পদক্ষেপ
নিয়েছিলেন।
কিন্তু ফিরােজ শাহ তুঘলকের সময় জায়গির প্রথা পুনঃপ্রবর্তনসহ সেনাবাহিনীতে বংশানুক্রমিক নিয়ােগ-
নীতি গ্রহণের ফলে সেনাবাহিনী দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ দুর্বল সেনাবাহিনীর পক্ষে বিশাল সাম্রাজ্যের সংহতি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
সালতানাতের বিশালতা: আকার আয়তনে দিল্লি সালতানাত ছিল বিশাল ও বিস্তৃত। এ সাম্রাজ্য রক্ষার জন্য প্রয়ােজন ছিল
প্রতিভাবান দক্ষ শাসকের যিনি কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরােপের মাধ্যমে সাম্রাজ্যের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারবেন।
কিন্তু সুদীর্ঘ সুলতানি যুগ পর্বে যােগ্য ও দক্ষতাসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়কের সংখ্যা ছিল খুবই অল্প। সুলতান ফিরােজ শাহ তুঘলক পর্যন্ত
কয়েকজন সুলতান শাসন প্রতিভা প্রদর্শনে সক্ষম হলেও পরবর্তীকালে আর অনুরূপ দক্ষতাসম্পন্ন সুলতান দেখা যায়নি।
দুর্বল সুলতানদের অযােগ্যতার কারণ বিশাল সাম্রাজ্য খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত অনিবার্য পতনের দিকে ধাবিত হয়।
সামন্তপ্রথার কুফল: দিল্লি সালতানাতের ক্ষয়িষ্ণু সামন্তব্যবস্থা এর পতনের অন্যতম কারণ ছিল। সমগ্র সাম্রাজ্যকে ক্ষমতালিন্সু শাসনকর্তাদের অধীনে অসংখ্য জায়গিরে বিভক্ত করার ফলে কেন্দ্রীয় শাসন দুর্বল হয়ে যায় এবং সালতানাতের সার্বভৌমত্ব সংকুচিত হয়ে পড়ে। অভিজাতদের মধ্যে দ্বন্দ্ব: সুলতানি যুগে শাসকদের অভিজাতদের ওপর নির্ভরশীলতা ছিল।
সুলতানগণ নিজ স্বার্থেই তুর্কি-অতুর্কি ও স্থানীয় অভিজাতদের দরবারে প্রতিষ্ঠা করতেন। সামরিক ও বেসামরিক উচ্চ পদে তাদের নিয়ােগ দেওয়া হতাে। এভাবে অভিজাততন্ত্র দিল্লি সালতানাতের সহায়ক শক্তিতে পরিণত হয়। সুলতানি যুগের শেষপর্বে এ অভিজাতনশ্রেণির মধ্যেও সংকট তৈরি হয়। ক্ষমতার প্রশ্নে অভিজাতশ্রেণির মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত সালতানাতকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল।
ক্রীতদাস প্রথার প্রতিক্রিয়া: রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সুলতানদের ব্রীতদাস প্রতিপালন এবং তাদের সামরিক ও বেসামরিক গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ােগে ক্রীতদাসদের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। বিশাল ক্রীতদাস প্রতিপালনে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ ব্যয় এবং এদের ক্ষমাতার লিপ্সা দিল্লি সালতানাতের পতন ঘটাতে সাহায্য করে।
হিন্দ ও শিয়াদের বিরােধিতা: এ কথা সত্য্ যে, রাজনৈতিক কারণে কয়েকজন সুলতান ধর্মীয় সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে পারেননি। অনুসালম হিন্দু সম্প্রদায় এমনকি শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ও তাদের অবিচারের শিকার হয়েছিল।
আবার পরমতসহিফ্ণুতার আদর্শে অনুপ্রাণীত হয়ে অনেক সুলতান হিন্দ সমপ্রদায়কে পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতাদানসহ উচ্চ রাজকাজে
অংশগ্রহণের ও সুযােগ দিয়েছিলেন। এতদসত্তেও সুলতানগণ হিন্দুদের মন জয় এবং তাদের আস্থা অর্জন করতে পারেননি।
অংশগ্রহণের ও সুযােগ দিয়েছিলেন। এতদসত্তেও সুলতানগণ হিন্দুদের মন জয় এবং তাদের আস্থা অর্জন করতে পারেননি।
উত্তর ভারতের রাজপুত ও দাক্ষিণাতাের হিন্দগণ সযােগ পেলেই স্বাধীনতা ঘােষণা করত। ভারতবর্ষের
সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের বিরােধিতা ও অসহযোগিতা সালতানাতের সংহতিকে বিপন্ন করে তুলেছিল। সুন্নি শাসনে নিজেদের नায় অধিকার না পাওয়ার অভিযােগে ভারতের শিয়া মুসলমানরাও সুলতানি শাসনের বিরােধিতা করে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের বিরােধিতা ও অসহযোগিতা সালতানাতের সংহতিকে বিপন্ন করে তুলেছিল। সুন্নি শাসনে নিজেদের नায় অধিকার না পাওয়ার অভিযােগে ভারতের শিয়া মুসলমানরাও সুলতানি শাসনের বিরােধিতা করে।
নৈতিক অবক্ষয়: দিল্লি সালতানাতের শেষ পর্বের অধিকাংশ সলতান এমনকি অভিজাতগণও রাজ্য শাসন অপেক্ষা বিলাস- ব্যসনে বেশি মত্ত থাকতেন। অতিরিক্ত মদ্যপান, ব্যভিচার ও দুর্নীতি তাদের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতাকে নষ্ট করে দিয়েছিল
ফলে তারা সাম্রাজ্যের সুশাসন বা এর সংহতি ধরে রাখতে ব্যর্থ হন।
ব্রটিপূর্ণ শাসননীতি: কোনাে কোনাে সুলতানের ত্রুটিপূর্ণ শাসননীতি দিল্লি সালতানাতের পতনের অন্যতম কারণ হিল যেমন মুহাম্মদ বিন তুঘলকের অবাস্তব উচ্চাভিলাষী মহাপরিকল্পনা এবং সুলতান ফিরােজ শাহের উদার শাসননীতি ইত্যাদি।
বৈদেশিক কারণ (External Causes)
মােজ্গল আক্রমণ: গােটা সুলতানি শাসনামলে সাম্রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে অসংখ্যবার মােজালগণ ভারত
আক্রমণ করেছে। তাদের আক্রমণে অনেক জনপদ ধ্বংস হয়েছে এবং লুণ্ঠনে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। তদুপার মােজাল আক্রমণ প্রতিহত করতে সুলতানদের ব্যতিব্যস্ত থাকার ফলে সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও সাম্রাভয সুদৃঢ়করণের কাজ ব্যাহত হয়েছে।
তৈমুর লঙের আক্রমণ: নানা কারণে দিল্नি সালতানাত যখন পতনােম্মখ ঠিক সেই সময় মধ্য এশিয়ার দুরধর্য সমরনেতা আমির তৈমুর লঙ ভারত আব্রমণ করেন (১৩৯৮-৯৯ খ্রি.)। তাঁর বর্ণনাতীত নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও লুণ্ঠন দিল্লি সালতানাতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়।
এ সুযােগে সালতানাতের বিভিন্ন অঞ্চল কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
দিল্নি সালতানাতের পতনের বিষয়টি শুধু সময়ের ব্যাপারে পরিণত হয়।
দিল্নি সালতানাতের পতনের বিষয়টি শুধু সময়ের ব্যাপারে পরিণত হয়।
বাবরের আক্রমণ ও সালতানাতের পতন: লােদী বংশের শেষ সুলতান ইব্রাহিম লােদীর প্রশাসনিক দুর্বলতা, তার
ঔম্বত্যপূর্ণ আচরণ ও আফগান আমিরদের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি খর্ব করার প্রচেষ্টায় কায়েমী স্বার্থান্বেষী অভিজাতবর্গ সুলতানের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছিল। এ অবস্থায় পাঞ্জাবের উচ্চাভিলাষী শাসনকর্তা দৌলত খান লােদী ও সিংহাসন প্রত্যাশী আলম খান লােদী কাবুল অধিপতি বাবুরকে দিল্লি আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান। গৃহদাহে জর্জারত দিল়লি সালতানাতের তদানীন্তন পরিস্থিতিতে ভাগ্যান্বেষী বাবুর সাফল্যের নিশ্চিত সম্ভাবনা দেখতে পান।
কাজেই অসন্তুষ্ট অভিজাতদের আমন্ত্রণ সানন্দে গ্রহণ করে তিনি ভারত আক্রমণ করেন। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবুর ইব্রাহিম লােদীকে পরাজিত করেন। এর ফলে ভারতে লােদী তথা দিল্লি সালতানাতের চূড়ান্ত পতন ঘটে এবং মুঘল শাসনের ভ্তি রাচিত
একক কাজ; দিল্লি সালতানাতের পতনের কারণসমূহ বিশ্লেষণ কর।
একক কাজ; দিল্লি সালতানাতের পতনের কারণসমূহ বিশ্লেষণ কর।
দলীয় কাজ: দিল্লি সালতানাতের বিভিন্ন শাসক সম্পর্কে উপস্থিত বক্তৃতা। (বক্তব্যের বিষয় লটারির মাধ্যমে
নির্বাচিত হবে।)
নির্বাচিত হবে।)
Thanks all.
সংগ্রহ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র বই থেকে।